ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে বাড়িতে মায়ের পাশে বসে ঘুমার্ত চোখ কচলাচ্ছিল ইয়াজেন আলহাসনাত। আগের রাতেই ইসরায়েলি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে সে। পাঁচ মাস আগে এক ভোরে বাড়িতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।




কোনো ধরনের অভিযোগ, মামলা, প্রমাণ বা বিচার ছাড়াই ইয়াজেনকে আটক করে রাখা হয়, যাকে বলা হয় ‘প্রশাসনিক আটক’ বিধি। ব্রিটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পুরোনো এই নিরাপত্তা বিধির অধীনে ইসরায়েল এভাবে ফিলিস্তিনিদের দিনের পর দিন কারাবন্দী করে রাখছে। 

ইয়াজেন বলে, ‘তাদের (ইসরায়েল) গোপন নথি আছে। তবে তাতে কী আছে, তারা তা বলবে না।’

সম্প্রতি গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের বিনিময়ে মুক্তি পাওয়া ১৮০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের একজন ইয়াজেন। 

ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিচ্ছে ঠিকই, বিপরীতে বছরের পর বছর ধরে ব্যাপক ধরপাকড়ও চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে বিনা অভিযোগে ও বিনা বিচারে বন্দী করা হয়েছে। এই সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ জনে গিয়ে ঠেকেছে।

ইয়াজেন যখন মুক্তি পেল, তখন তার পরিবারকে প্রকাশ্যে বিষয়টি উদ্‌যাপন না করতে এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলতে বলে দেওয়া হয়। একই নির্দেশনা আরও দুই কিশোরের পরিবারকেও দেওয়া হয়েছে। তাই তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসির সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু এই তিন পরিবারই বিনা অভিযোগে আটকের বিষয়টিকে সবার নজরে আনতে চায়।

ইসরায়েলের ভাষ্য, তাদের এই বিধি আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। 

পশ্চিম তীরের মিলিটারি প্রসিকিউশনসের সাবেক পরিচালক মরিস হার্শ বিবিসিকে বলেন, বন্দীদের আপিলের সুযোগ দিয়ে এবং প্রতি ছয় মাস পরপর তাদের আটকের বিষয়টি পর্যালোচনা করার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ‘শুধু আন্তর্জাতিক আইনই মানছে না; বরং এটিকে ছাপিয়ে গেছে’।

তবে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, এই বিধির অত্যধিক ব্যবহার নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের শামিল। এই বিধি এত মানুষকে এভাবে আটক করার জন্য করা হয়নি। বন্দীরা ঠিকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনও করতে পারে না, আপিলও নয়। কারণ, তাদের নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করার কোনো সুযোগ নেই।

ফিলিস্তিনি বন্দীদের পর্যবেক্ষণ করা ইসরায়েলের মানবাধিকার সংস্থা হামোকডের নির্বাহী পরিচালক জেসিকা মোনটেল বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীন বিনা অভিযোগে আটক ব্যতিক্রমের মধ্যেও বিরল। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি বর্তমানে এমন কোনো বিপদে থাকেন, যেখানে তাকে আটক করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই, তখন তাকে আটক করা যাবে। কিন্তু এটা স্পষ্ট, ইসরায়েল এটিকে সেভাবে ব্যবহার করছে না। ইসরায়েল হাজার হাজার মানুষকে বিনা অভিযোগে আটক করছে এবং এ নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন না তুলতে না পারে, সে জন্য বিনা অভিযোগে আটক বিধিকে ব্যবহার করছে।’

১৯৪৫ সাল থেকে ফিলিস্তিনিরা এই বিনা অভিযোগে আটকের বিধির শিকার হচ্ছে। প্রথমে ব্রিটিশ শাসনাধীনে, এরপর ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে। ইসরায়েলে বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে এই আইনের প্রয়োগ খুব কমই দেখা গেছে। তবে শিশুসহ পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের আটকে রাখার জন্য এই আইনের দেদার ব্যবহার দেখা যায়।

বিনা অপরাধে আটক ব্যক্তিদের সামরিক আদালতে শুনানি হওয়ার নিয়ম রয়েছে। তা–ও আবার ইসরায়েলি সামরিক বিচারকের সামনে। কিন্তু বন্দীদের কাছে বা তাদের আইনজীবীদের কাছে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো প্রমাণ প্রকাশ করার দায়বদ্ধতা নেই। বন্দীদের ছয় মাসের শাস্তি হতে পারে। কিন্তু সামরিক আদালত সেই ছয় মাসের মেয়াদ খুশিমতো বাড়াতে পারে। এর মানে হলো প্রশাসনিক আটক ব্যক্তিদের ঠিক কত দিন এভাবে আটকে থাকতে হবে, তার কোনো হিসাব নেই।

ইয়াজেন বলে, ‘ওই অবস্থায় আসলে বন্দীদের সামনে থাকে শুধু অনিশ্চয়তা। ছয় মাস শেষ হলে বেরিয়ে যাবেন, নাকি এই মেয়াদ আরও এক বা দুই বছর ধরে বাড়তে থাকবে।’

বন্দীদের জন্য ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, সেটা জানার তাদের কোনো সুযোগ থাকে না বলে সুপ্রিম কোর্টেও তাদের বলার কিছু থাকে না। ফলে ইসরায়েলি আদালতে তাদের দণ্ডিত করার হার ৯৯ শতাংশ।

জেরুজালেম-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা আইনজীবী মাহের হান্না বলেছেন, ‘সামরিক আদালতে ফিলিস্তিনিদের নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। পুরো ব্যবস্থা এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে একজন ফিলিস্তিনির আত্মরক্ষার উপায়কে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রমাণের বোঝা থেকে মুক্তি দেয়।’

ইয়াজেনের মা সাদিয়া বলেছেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের এই নীতির ব্যবহার ‘লাল, সবুজ—সব রেখা অতিক্রম করেছে’।

১৬ বছরের ওসামা মারমেশকে রাস্তা থেকে তুলে নম্বরবিহীনি একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আটকের প্রথম ৪৮ ঘণ্টা তার বাবা নাইফ ছেলে কোথায় আছে, সেই সম্পর্কেই কোনো ধারণা পাননি। ওদিকে ওসামাও বারবার জানতে চাইছিল, তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ। কিন্তু প্রতিবারই তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ১৭ বছরের মুসা আলোরিদাতকে তার ঘর থেকে ভোরবেলা ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি বাহিনী। আনার সময় ওয়ার্ডরোবে গুলি করে কাচ ভেঙে ফেলেছিল। সে কোথায় আছে, তার পরিবার তিন দিন পর্যন্ত জানত না।

ইয়াজেন, ওসামা বা মুসা যত দিন বন্দী অবস্থায় ছিল, সে সময়টা তাদের বা তাদের পরিবার বা আইনজীবী—কাউকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেখায়নি। সম্প্রতি যখন বন্দী বিনিময়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেখানে এই তিনজনের নাম ছিল। তাদের নামের সঙ্গে অভিযোগ লেখা ছিল, ‘ওই এলাকার নিরাপত্তার জন্য হুমকি’।

তালিকার আরেকটি সংস্করণে বলা হয়েছে, ইয়াজেন ও মুসা ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওসামাকে যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন তাকে একটি সংক্ষিপ্ত অভিযোগপত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে লেখা ছিল, দুই মাস আগে ওসামা ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে একটি পাথর ছুড়েছিল।

সামরিক বাহিনীর আইনজীবীদের সাবেক পরিচালক মরিস হার্শ বলেন, সীমিতভাবে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তার ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত কিছু বলাটা ভুল হবে। তিনি আরও বলেন, এই ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যেসব অভিযোগ পাওয়া যায় আর গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে তাদের সম্পর্কে যেসব তথ্য থাকে, এই দুইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।

মরিস বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুয়ানতানামোতে মার্কিনরা বিনা অভিযোগে আটকের এই নীতি ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গৃহীত।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু এটি আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত পদক্ষেপ, তাহলে শুধু ইসরায়েলকেই কেন এটি ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হবে। আমরাই সম্ভবত সর্বোচ্চ সন্ত্রাসী হুমকির মুখোমুখি হয়ে থাকি।’

ইয়াজেন, ওসামা ও মুসা—তিনজনই চার থেকে সাত মাস কারাগারে কাটিয়েছে। তিনজনের ভাষ্য, ৭ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত তারা যে অবস্থায় ছিল, তা তুলনামূলক ভালোই ছিল। কিন্তু সেই দিনের পর অনেক কিছু পাল্টে যায়। বিছানার চাদর, কম্বল, কাপড়চোপড় ও খাবারদাবার তাদের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল।

ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছে, হামাস হামলা চালানোর পর তারা কারাগারে জরুরি অবস্থা বলবৎ রেখেছিল। একই সঙ্গে বন্দীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়।

ইয়াজেন, ওসামা ও মুসা—তিনজনই বন্দী বিনিময়ে নারী ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিত্তিতে মুক্তি পায়। তবে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এখনো ২ হাজার ৮৭৩ ফিলিস্তিনি বিনা অভিযোগে কারাগারে আটক রয়েছেন।

মুসা বলে, তারা তিনজনই স্কুলে পড়ালেখা শেষ করতে চায়। কিন্তু আবার আটক হওয়ার অব্যাহত হুমকির মধ্যে তারা অনেকটা ‘মনস্তাত্ত্বিকভাবে আটক’ অবস্থায় রয়েছে।

ইয়াজেন বলে, ‘তারা (ইসরায়েল) আমাদের এখন একটা বড় কারাগারে ছেড়ে দিয়ে রেখেছে।’ইয়াজেনের দিকে তাকিয়ে তার মা বলেন, ‘এখানে কোনো শান্তি নেই। তারা তোমাকে যেকোনো সময় তুলে নিয়ে যেতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া আব্রামস ট্যাংকের প্রথম চালান হাতে পেয়েছে ইউক্রেন সেনাবাহিনী। গতকাল সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ কথা জানিয়েছেন। এতে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ধীরগতিতে চলা পাল্টা আক্রমণ জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।



রুশ বাহিনীর দখলে থাকা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে গত জুলাইয়ের শুরুর দিকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে কিয়েভ। এর আগে পশ্চিমা দেশগুলো এ হামলার জন্য ইউক্রেনের বেশ কয়েক ব্যাটালিয়ন সেনাকে প্রশিক্ষণ দেয়। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিশ্রুত কিছু অস্ত্রও হাতে পায় কিয়েভ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভের কাছ থেকে সুখবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে পৌঁছে গেছে আব্রামস ট্যাংক। আমাদের সেনা ব্রিগেডগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সেগুলোকে প্রস্তুত করা হচ্ছে।’

তবে প্রথম চালানে কতগুলো আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনে পৌঁছেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি জেলেনস্কি। আর এসব ট্যাংক সম্মুখযুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করতে কত সময় লাগতে পারে, সে বিষয়েও কিছু বলেননি তিনি।

চলতি বছরের শুরুতে কিয়েভকে ৩১টি আব্রামস ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওয়াশিংটন। গত ১৮ মাসে ইউক্রেনকে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব ট্যাংকের

সঙ্গে সাঁজোয়া যানবিধ্বংসী ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ ১২০ মিলিমিটারের গোলাও সরবরাহ করা হবে।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব নয়—এমন অভিযোগে শুরুতে আব্রামস ট্যাংক দিতে রাজি ছিল না যুক্তরাষ্ট্র। পরে ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্রদের চাপের মুখে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ওয়াশিংটন।

রুশ নৌবহর কমান্ডার নিহত
ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর নৌবহরের সদর দপ্তরে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই নৌবহরের কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

গতকাল ইউক্রেন এ দাবি করেছে। গত সপ্তাহে নজিরবিহীন এই হামলা চালিয়েছিল ইউক্রেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী জানিয়েছে, হামলায় রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর নৌবহরের কমান্ডারসহ ৩৪ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০৫ দখলদার। এই হামলাকে মস্কোর জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ক্রিমিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সেভাস্তোপোল বন্দরে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

ওদেসায় ব্যাপক হামলা
এদিকে গত রোববার দিবাগত রাতে ইউক্রেনের ওদেসা বন্দরে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। গতকাল ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এ কথা জানিয়েছে।

হামলায় বন্দরে মজুত রাখা অনেক শস্য নষ্ট হয়ে গেছে। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, হামলায় রাশিয়া ১৯টি ড্রোন, ২টি ওনিক্স সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২টি ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এর মধ্যে সব কটি ড্রোন আর ১১টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়।

ইউক্রেনে হামলা চালাতে গতকাল সোমবার রাতে ৩৮টি ড্রোন পাঠিয়েছিল রাশিয়া। এর মধ্যে ২৬টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী আজ মঙ্গলবার এ দাবি করেছে।

তবে শস্য রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত দানিউব নদীর তীরবর্তী ইউক্রেনীয় বন্দর ইজমাইলে আবারও হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের ওডেসার আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ কিপার মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামে বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে একাধিক রুশ ড্রোন বন্দরটির অবকাঠামোতে হামলা চালায়। এতে ৩০টির বেশি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন দুজন চালক।

গত জুলাই মাসে কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় রাশিয়া। এর পর থেকে তারা ইউক্রেনের দক্ষিণ ওডেসা ও মাইকোলাইভ অঞ্চলের শস্য রপ্তানির অবকাঠামোতে হামলা বাড়িয়ে দেয়।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী টেলিগ্রামে বলেছে, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ৩৮টি শাহেদ-১৩৬/১৩১ ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার হামলা চালানোর তথ্য তারা রেকর্ড করেছে। ইউক্রেনের বিমানবাহিনীসহ অন্যান্য সামরিক ইউনিট ইরানের তৈরি এই ড্রোনগুলোর মধ্যে ২৬টিকে ধ্বংস করেছে।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য রোমানিয়ার সীমান্তে ইজমাইল বন্দরটি অবস্থিত। চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউক্রেনীয় কৃষিপণ্য রপ্তানির একটি প্রধান রুট হয়ে ওঠে এই বন্দর।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই বন্দরকে নিশানা করে রাতের বেলায় ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে রাশিয়া।

রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের প্রধান দুটি কৃষিশক্তি। দেশ দুটির কৃষিপণ্য বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই হামলার জেরে রাশিয়ার ওপর দফায় দফায় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বে কৃষিপণ্যের সরবরাহসহ বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যায়।
পাইলটবিহীন বিমান (UAV) বা ড্রোন বিমান আধুনিক সমরপ্রযুক্তির এক অনন্য সংযোজন। দিবা-রাত্রি শত্রু দেশের আকাশসীমায় গুপ্তচরবৃত্তি চালানো, নিজ দেশের আকাশসীমা পাহারা দেয়া, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, শত্রুদের বেতার ও রাডার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো, আড়ি পেতে তথ্য যোগার করা থেকে শুরু করে প্রয়োজনে ছোটখাটো একটি যুদ্ধবিমানের ভুমিকাও পালন করতে পারে এই বিমান।

এসব বিমান পাইলট বিহীন হওয়ায় যুদ্ধে পাইলটের মৃত্যুঝুকি থাকেনা তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে এই ধরনের বিমান ব্যবহার করা যায়। বর্তমানকালের অনেক ড্রোন বিমান স্টিলথ প্রযুক্তির হওয়ায় খুব সহজেই এটি শত্রু দেশের রাডার সিস্টেম ফাঁকি দিয়ে তৎপরতা চালাতে পারে। তাই বর্তমান যুগে কার্যকর ও শক্তশালি বিমানবাহিনী এবং আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ড্রোন বিমানের কোনও বিকল্প নেই।

আসুন এবার জেনে নেয়া যাক বিশ্বের আলোচিত কয়েকটি ড্রোন বিমান সম্পর্কে।

RQ-170 Sentinel

RQ-170 Sentinel

আরকিউ-১৭০ সেন্সিয়াল মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মারটিন নির্মিত বর্তমান বিশ্বের সেরা ড্রোন বিমানগুলোর একটি।
অত্যাধুনিক স্টিলথ ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিমানটি মূলত রিকন অর্থাৎ শত্রু দেশের আকাশসীমায় নজরদারি করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম এই বিমানটির আকৃতি অনেকটা মার্কিন স্টিলথ বোম্বার বি-২ এর মত। এটি প্রায় ৫০,০০০ ফুট উপর দিয়ে উড়ে জেতে পারে।

মার্কিন বিমানবাহিনীর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এই বিমানটি অপারেট করে থাকে। এটি ২০০৭ সালে মার্কিন বিমান বাহিনীতে নিয়োজিত হয়।একটি Garrett TFE731 অথবা General Electric TF34 টার্বোফ্যান ইঞ্জিনে পরিচালিত এই বিমানটি আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানে পর্যবেক্ষণ ড্রোন হিসেবে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেন হত্যা মিশনেও এই বিমানটি অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়েছে। তবে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে ইরান আর্মির ইনটেলিজেন্ট ইউনিট একটি আরকিউ-১৭০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করে এবং তাদের ধৃত বিমানটির ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে।মার্কিন পক্ষ থেকে পরে তাদের এই ধরনের একটি বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেছে।

MQ-1 Predator

MQ-1 Predator

এমকিউ-১ প্রিডেটর মার্কিন প্রতিষ্ঠানজেনারেল এটোমিক্স এরোনটিক্যালস নির্মিত একটি কমব্যাট ড্রোন।মার্কিন বিমানবাহিনী এবং সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এই ড্রোনটি ব্যবহার করে। এটি একি সাথে আকাশে গোয়েন্দাগিরি এবং কমব্যাট মিশনে সমান পারদর্শী। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরা ও সেন্সর সংবলিত এই ড্রোনটি ১০০০০ ফুট দূর থেকেই মানবদেহের হিট সিগনেচার শনাক্ত করতে পারে। এটি কন্ট্রোল ইউনিটের নির্দেশনা ও স্যাটেলাইটের সাহায্যে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যস্থির করে মিসাইল হামলা চালায়।

আফগানিস্থান, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, লিবিয়া ও সোমালিয়াসহ বিশ্বের অনেক স্থানে মার্কিন বাহিনী এটি ব্যবহার করে আশাতীত ফল লাভ করে। একটি Rotax 914F প্রপেলার ইঞ্জিনে চালিত এই ড্রোনটি ২৫০০০ ফুট উচ্চতায় উঠতে পারে এবং এর সর্বোচ্চ ঘণ্টায় গতি ২১৭ কিঃ মিঃ।

দীর্ঘক্ষণ আকাশে ভেসে থাকার ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিমানটি বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে এই ধরনের ড্রোন ব্যবহার করে বেসামরিক মানুষ হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ইরানি বিমানবাহিনী তাদের আকাশসীমা থেকে একটি প্রিডেটর ড্রোনকে গোলাবর্ষণ করে তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে ইউএস বিমানবাহিনীসহ ইতালি, মরক্কো, তুরস্ক ও আরব আমিরাত এই ড্রোনটি ব্যবহার করছে।
Scan Eagle

Scan Eagle

স্ক্যানঈগল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং ইনশিটু ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির তৈরি একটি গোয়েন্দা ড্রোন। এর পরিচালন খরচ অনেক কম এবং দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার উপযোগী। মূলত মৎস্য শিকারিদের কাজে সাহায্য করার জন্য এটি তৈরি করা হলেও বর্তমানে মার্কিন আর্মি, নেভি ও বিমানবাহিনী বিভিন্ন গোয়েন্দা অভিযানে এটি ব্যবহার করে আসছে। নিয়মিতভাবে আপগ্রেড করে এটিকে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।

এটি ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম ইউএস নেভিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।শক্তিশালী ইনফ্রারেড ক্যামেরা এবং NanoSAR A রাডার সংবলিত এই ড্রোনটি আকাশে গোয়েন্দা অভিযানে এর কার্যকারিতা প্রমান করেছে।একটি ২ স্ট্রোক পিস্টন ইঞ্জিন সংবলিত এই ড্রোনটি ১৬০০০ ফুট উচ্চতায় উঠতে পারে এবং গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২৮ কিঃমিঃ ।

মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ও ইরাক অভিযানে এই ড্রোন ব্যবহার করে।২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর ইরান তাদের আকাশসীমা থেকে এই ধরনের একটি ড্রোন আটক করার দাবি করেছে। যদিও মার্কিন বাহিনী তাদের এরকম কোন ড্রোন হারানোর কথা স্বীকার করেনি।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা, কলাম্বিয়া ইত্যাদি দেশ এই ড্রোনটি ব্যবহার করছে।
ইরান সম্প্রতি স্ক্যানঈগল ড্রোনের অনুকরণে তাদের নিজস্ব ড্রোন তৈরির ঘোষণা দিয়েছে।

IAI Eitan

IAI Eitan

এইটান ইসরায়েলি এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি নির্মিত একটি অত্যাধুনিক গোয়েন্দা ড্রোন বিমান। এটি মূলত ইসরায়েল নির্মিত হেরন (Heron) ড্রোনের একটি উন্নত সংস্করন।

দীর্ঘ সময় আকাশে ভেসে থাকার ক্ষমতাসম্পন্ন এই ড্রোনটি কমব্যাট মিশনেও ব্যবহার উপযোগী। অটোম্যাটিক টেকঅফ-ল্যান্ডিং, উন্নত এভিয়নিক এবং মাল্টিপল টার্গেট আইডেন্টিফাইং ক্ষমতাসম্পন্ন এই ড্রোন বিমানটি বর্তমান বিশ্বের সেরা ড্রোন গুলোর মধ্যে অন্যতম।

২০০৭ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এটি ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও ব্রিটেনে ইসরায়েল এই বিমান রপ্তানি করেছে। একটি Pratt & Whitney PT6A ইঞ্জিন সংবলিত এই বিমানের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০৭ কিঃমিঃ এবং সার্ভিস সিলিং রেট ৪৫,০০০ ফুট।

একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় ২০০৯ সালে সুদান থেকে গাজা অভিমুখি একটি ইরানি সামরিক কনভয়ের উপর এয়ার স্ট্রাইকে এই ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল।
IAI Harpy

IAI Harpy

হারপি ইসরায়েল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি (IAI) নির্মিত একটি আনম্যানড কমব্যাট এরিয়াল ভিহিকল (UCAV) । এই ড্রোনটি একইসাথে কমব্যাট এবং রিকন দুই ধরনের মিশনেই অংশ নিতে পারদর্শী।

মূলত শত্রু দেশের রাডার সিস্টেমে ঝটিকা আক্রমন করার জন্য এই ড্রোনটি তৈরি করা হলেও এটি গোয়েন্দাগিরিসহ বহুমুখী কাজে ব্যবহার উপযোগী। এটি অনেক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক বহন করতে পারে।

২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণচীনের কাছে এই ধরনের ড্রোন রপ্তানি করতে বাধা দিয়েছিল। কারন তাদের ধারনা, এই ড্রোনে মার্কিন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা চীনের কাছে চলে যাওয়ার আশংকা থাকে। কিন্তু ইসরায়েল মার্কিন দাবি নাকচ করে দিয়ে জানায়, এটি সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলি প্রযুক্তিতে নির্মিত এবং ইসরায়েল তাদের এই বিমান রপ্তানি করার অধিকার রাখে। একটি UEL AR731 Wankel rotary ইঞ্জিনে পরিচালিত এই ড্রোনটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৮৫ কিঃমিঃ ।

এটি প্রায় ৩২ কেজি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক বহন করতে পারে। বর্তমানে ইসরায়েল ছাড়াও চিলি, দক্ষিন কোরিয়া, গণচীন, ভারত, তুরস্ক ইত্যাদি দেশ এই ড্রোন ব্যবহার করে।

SELEX Galileo Falco

SELEX Galileo Falco

ফ্যালকো ইটালির SEGaliLEX leo Avionica নির্মিত একটি পর্যবেক্ষণ ইউএভি। এটি মূলত গোয়েন্দা নজরদারির জন্য বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছে। অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড ক্যামেরা এবং সেন্সর সংবলিত এই ড্রোনটি অপেক্ষাকৃত মাঝারি উচ্চতায় আকাশে ভেসে থাকতে সক্ষম ।

এটি সাধারনত কোনও অস্ত্র বা মিসাইল ব্যবহার করেনা তবে এর পরবর্তী আপগ্রেড ভার্সন গুলোতে কমব্যাট উইপন সংযোজন করা হবে। এটি ১৭ ফুট লম্বা এবং ২৪ ফুট চওড়া একটি বিমান যা অপেক্ষাকৃত মাঝারি উচ্চতায় আকাশ থেকে নজরদারি চালাতেপারে ।

সিঙ্গেল ইঞ্জিনে পরিচালিত ড্রোনটি ঘণ্টায় ২১৬ কীঃমিঃ বেগে চলতে পারে এবং এর সার্ভিস সিলিং রেট ২১,৩২৫ ফুট। এটি প্রায় ৭০ কেজি বোমা বহনে সক্ষম যদিও বর্তমান ভার্সন গুলোতে কোনও যুদ্ধাস্ত্র সংযোজন করা হয়নি। উন্নতমানের AESA synthetic aperture radar (SAR) রাডার সংবলিত এই ড্রোনটি ইটালি, পাকিস্তান, লিবিয়া, জর্ডান ও সৌদি আরবের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করছে।

TAI Anka

TAI Anka

আনকা তুরস্কের এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি নির্মিত একটি অত্যাধুনিক নজরদারি ড্রোন বিমান। মূলত একটি পৌরাণিক জীবের নামে এই ড্রোনটি নামকরণ করা হয়েছে।
এটি মধ্যম উচ্চতায় দীর্ঘক্ষণ আকাশে টহল দিতে সক্ষম। আনকা ড্রোনের নির্মাণের মাধ্যমে তুরস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরে ৩য় দেশের মর্যাদা পেল যারা MALE UAV নির্মাণ করতে পারে।

এই ধরনের ড্রোনের বৈশিষ্ট্য হল এরা দীর্ঘক্ষণ আকাশে ভেসে থাকতে সক্ষম। অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড ইলেকট্রো অপটিক ক্যামেরা, সেন্সর, সিনথেটিক এপারেচার রাডার ও অন্যান্য বহুবিধ প্রযুক্তি সংবলিত এই ড্রোনটি তুরস্কের সামরিক সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। একটি Thielert Centurion ইঞ্জিনে চালিত এই ড্রোন ৩০,০০০ ফুট অবধি উচ্চতায় উঠতে পারে এবং এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১৭ কিঃমিঃ ।

এটি শীঘ্রই তুরস্কের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। মিশর সম্প্রতি এরূপ কয়েকটি ড্রোন কেনার জন্য তুরস্কের সাথে চুক্তি করেছে। এছাড়াও সৌদি আরবও এই ড্রোন কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

Shahed 129

Shahed 129

শাহেদ ১২৯ ইসলামিক রিপাবলিক ইরান নির্মিত অত্যাধুনিক কমব্যাট ড্রোন। এটি ইরান নির্মিত প্রথম MALE ইউএভি বা ড্রোন বিমান।

এটি একাধারে আকাশে গোয়েন্দাগিরি এবং কমব্যাট উভয় ধরনের মিশনেই সমান পারদর্শী। ইরানের মালিক আসতার এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহেদ এভিয়েশন এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ডিজাইনকৃত এই ড্রোনটি নির্মাণ করেছে ইরানের সর্ববৃহৎ বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান HESA ।

গ্রেট প্রফেট সেভেন সামরিক মহড়ার সময় এই ড্রোনটি সর্বপ্রথম উন্মোচিত করা হয়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইরান এই ড্রোন নির্মাণের কথা ঘোষণা দেয়। এটি ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় আকাশে ভেসে থাকতে পারে এবং সর্বোচ্চ ২০০০ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত এলাকায় অপারেশন চালাতে পারে।

ইরানের ঘোষণা অনুযায়ী এতে ইরান নির্মিত ব্রিটিশ ডিজাইনের Wankel ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ড্রোনটি ইরানি Sadid-1 মিসাইল বহন করে থাকে। এটি ১০ মিটার লম্বা এবং ডানার বিস্তৃতি ২০ মিটার। শীঘ্রই এটি ইরানের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Karrar

Karrar

কারার ইসলামিক রিপাবলিক ইরান নির্মিত অত্যাধুনিক কমব্যাট ড্রোন।পার্সিয়ান কারার(karrar) শব্দের অর্থ আক্রমণকারী।
এটি ইরানে তৈরি প্রথম লং রেঞ্জ কমব্যাট ক্যাপাবল ড্রোন যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে লক্ষ্যবস্তুতে ঝটিকা হামলায় পারদর্শী। এটি প্রথম আকাশে ওড়ে ২০০৯ সালে এবং ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট ইরানের প্রেসিডেন্ট ডঃ আহমাদিনেজাদ এই ড্রোন নির্মাণের ঘোষণা দেন । ইরানের স্টেট টেলিভিশনে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী,এর কমব্যাট রেঞ্জ ১০০০ কিলোমিটার ।

এর মাধ্যমে ১১৫ কেজি বোমা অথবা ২২৭ কেজি precision-guided munition বহন করা যায়। এটি ৪টি Kowsar এন্টি-শিপ মিসাইল ও বহন করতে পারে। এটি আকাশে ওড়ার জন্য রকেট অ্যাসিস্ট সিস্টেম ব্যবহার করে। এই ড্রোনটি ৪ মিটার লম্বা ।
একটি ইরানিয়ান Toloue-4 সিঙ্গেল এঞ্জিনে তৈরি এই ড্রোনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৯০০ কিঃমিঃ। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কারার ড্রোন ইরানের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা আরও সুদৃঢ় করবে বলে ইরানি সামরিক বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেন।

SAGEM SPERWER-B

SAGEM SPERWER-B

সাজেম স্পারওয়ার ফ্রান্সভিত্তিক ইলেক্ট্রোনিক ফার্ম সাজেম নির্মিত একটি রিকন ও কমব্যাট ইউএভি। এটি আকাশে একইসাথে গোয়েন্দাগিরি এবং কমব্যাট উভয় মিশনেই সমান পারদর্শী।

প্রায় ১২ ঘণ্টাব্যাপী একনাগাড়ে আকাশে ভেসে থাকাতে পারে এই ড্রোনটি। প্রায় ১০০ কেজি বিস্ফোরক বহন ক্ষমতাসম্পন্ন এই ড্রোনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইলেক্ট্রো-অপটিক ইফ্রারেড সেন্সর, কমুনিকেশন ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজি, এসএআর রাডার সংযোজিত হয়েছে।
এটি Rafale Spike-LR ধরনের এন্টি-ট্যাংক মিসাইল বহন করে থাকে। একটি SNECMA ইঞ্জিনে চালিত এই ড্রোন ক্রুজ স্পীডে প্রায় ১৬০০০ ফুট উপর দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম ।

বর্তমানে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, গ্রীস, ও কানাডার সামরিক বাহিনী এই বিমানটি ব্যবহার করে ।


যেখানে কোনো সীমান্ত নেই, সেখানে কোনো দেশ নেই, এই সীমান্ত রক্ষা আর সীমান্ত বাড়ানোর জন্য ছোট-বড় সব দেশেই রয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনী। বিভিন্ন জরিপ, পরিসংখ্যান এবং গবেষণায় আমেরিকান প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে গণ্য করা হয়, এ বাহিনীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তথ্য সহ নিচে দেয়ো হলো ।


তাহলে আসুন জেনে নিই আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাহিনী সম্পর্কে

শুরুর কথা
ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, ইতিহাসবিদ, সমালোচক ও লেখক বার্টান্ড আর্থার উইলিয়াম রাসেল সংক্ষেপে বার্টান্ড রাসেল বলেছেন, যুদ্ধ কখনো কে সঠিকÑ তা বিচার করে না। শুধু কে অবিশিষ্ট আছে তা বিচার করে। ষোড়শ শতকে ইংরেজ কবি, লেখক ও নাট্যকার জন লিলি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইউফুয়েস : দ্য অ্যানাটমি অব উইট’ এ বলেছেন ‘প্রেম এবং যুদ্ধে সবই সঠিক’ কারণ যাই থাকুক না কেন, এ কথা সত্য যে, পৃথিবীর মোট সম্পদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেছনে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেছনে ব্যয় এবং বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তিমত্তার একটি সার্বিক চিত্র পাওয়া যায় গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার নামক একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে। ২০০৬ সাল থেকে ১৩৭টি দেশের ওপর গবেষণাকারী সংস্থাটির মতে, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে আমেরিকায়। জল, স্থল ও আকাশপথে যুদ্ধ করার সক্ষমতা, সামরিক ব্যয়, সৈন্য ও যুদ্ধ সরঞ্জামের সংখ্যা ইত্যাদিসহ ৫৫টি বিষয় বিবেচনা করে এই মত দিয়েছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। এই বিশাল বাহিনীর পেছনে আগামী বছর ৭১৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করার পরিকল্পনা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প; যা গত বছরের চেয়ে ৩৩ বিলিয়ন বা পাঁচ শতাংশ বেশি (সূত্র : সিএনবিসি নিউজ)। তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের এক বছরের বাজেট প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের মতো এমন ১২টি দেশ চালাতে যে টাকা লাগে, প্রায় সে পরিমাণ টাকা খরচ হয় আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেছনে।
স্টক হোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট নামের সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থার ২৯ এপ্রিল ২০১৯-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিগত ২০১৮ সালে পৃথিবীর সামরিক ব্যয় এক দশমিক আট ট্রিলিয়ন (১৮০০ বিলিয়ন) ডলার অতিক্রম করেছে। যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে দুই দশমিক ছয় শতাংশ বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশের মতো ৩০টি দেশ চলতে পারে বিশ্বের প্রতিরক্ষা খাতের খরচ দিয়ে। প্রতিরক্ষা খাতে খরচের দিকে থেকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশ হলো- আমেরিকা, চীন, সৌদি আরব, ভারত ও ফ্রান্স। পৃথিবীর মোট সামরিক বাজেটের অর্ধেক (৫০ শতাংশ) খরচ করে এই পাঁচ দেশ। বাকি পৃথিবীর খরচ ৪০ ভাগ, এর মধ্যে আবার সুইডেনের এই গবেষণা সংস্থার গবেষক ড. নান টিয়ানের দাবি শুধু আমেরিকা ও চায়না মিলে পৃথিবীর মোট সামরিক বাজেটের অর্ধেক (৫০ শতাংশ) খরচ করে। সে হিসাবে বাকি ১০ ভাগ ও সৌদি আরব, ভারত ও ফ্রান্স এবং অবশিষ্ট ৪০ ভাগ খরচ করে গবেষণাকৃত প্রায় ১৮০টি দেশ, (সূত্র : এসআইপিআরআই)।

আমেরিকার মতো একটি দেশ কেন এই বিশাল অঙ্কের টাকা প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করে। তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে চমৎকার কিছু তথ্য পাওয়া যায়। যেমনÑ লেখক, সাংবাদিক গবেষক ও শান্তিকামীদের কানাডাভিত্তিক সংগঠন গ্লোবাল রিসার্চ বলছে, ১৭৭৬ সালে আমেরিকা প্রতিষ্ঠার পর ২৪৪ বছরের ইতিহাসে মাত্র ২১ বছর শান্তিতে ছিল। অবশিষ্ট ২৩৯ বছরই আমেরিকান সৈন্যরা কোথাও না কোথাও যুদ্ধ করেছে। দিন-ক্ষণের হিসাবে ইতিহাসের ৯৩ শতাংশ দিন বা গড়ে বছরের ৩৪০ দিন যুদ্ধ করেছে আমেরিকান সৈন্যরা আর ২৫ দিন শান্তিতে ছিল। এই উপাত্তকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক ম্যাগাজিন স্মিথ সোনিয়ান ম্যাগাজিনের জানুয়ারি ২০১৯ সংখ্যায় ‘এ ন্যাশন অ্যাট আর্মস’ প্রবন্ধে গবেষক ডেভিড লভেট দেখিয়েছেন ১৭৭৫ থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের ৯৩.৫ শতাংশজুড়ে অর্থাৎ গড়ে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৪১ দিনেরও বেশি যুদ্ধ করেছে আমেরিকানরা।
ম্যাগাজিনের একই সংখ্যায় ‘আমেরিকা অ্যাট ওয়ার’ শীর্ষক প্রবন্ধে গবেষক স্টিফেনি সাভেল তথ্যচিত্রসহ এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, বিশ্বে এই মুক্ত মুহূর্তে ৮০টি দেশে সামরিক কারণে অবস্থান করছে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। এজন্য তারা অবস্থান করছে ৪০টি ইউএস মিলিটারি বেইস বা সামরিক স্থাপনায়। তার মতে, ৬৫টি দেশে জঙ্গিবিরোধী প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আমেরিকান সেনারা আর ২৬টি আলাদা আলাদা সামরিক প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে বিশ্বজুড়ে।

রীতি মেনে রিজার্ভ
আমেরিকার সংবিধানের অষ্টম অধ্যায়ের প্রথম ধারা ইউএস কোড ২৪৬ এবং ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার প্রবর্তিত ৪৭৭১ নং বিশেষ ধারা অনুসারে আমেরিকার পুরুষ নাগরিকের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করার জন্য নথিভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক। আইনানুসারে আমেরিকার একজন যুবককে ১৮তম জন্মদিনের ২৩০ দিনের মধ্যে ‘সিলেকটিভ সানির্ভস সিস্টেম (সংক্ষেপে এসএসএস) নামক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সংরক্ষিত সেনা বা রিজার্ভ হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে হয়। নারীদের ক্ষেত্রে তা ঐচ্ছিক। এই নিবন্ধন না করলে উচ্চতর শিক্ষার জন্য সরকারি অনুদান এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় না। নিবন্ধনকৃতদের একটি সংক্ষিপ্ত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময় প্রতি বছর ৩৯ দিনের বার্ষিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হয়।

এই সংরক্ষিত সৈন্যদের যে কোনো জাতীয় প্রয়োজনে যেমন দুর্যোগ মোকাবিলা এবং যুদ্ধে অংশ নিতে হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধে সংরক্ষিত সৈন্যদের ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়া ১৯৯০-৯১ এ কুয়েত পুনরুদ্ধারে ৩৫ হাজারেরও বেশি সংরক্ষিত সৈন্য অংশগ্রহণ করে। সম্মিলিতভাবে এই সংরক্ষিত সেনাদের সেনা, নৌ, বিমান ও মেরিন বাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে রাশিয়ায় এই সংরক্ষিত সৈন্যের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ, ভারতে প্রায় ২১ লাখ এবং তিন নম্বর অবস্থানে থাকা আমেরিকায় প্রায় ৯ লাখ। তবে পুরনোসহ এই সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, প্রতি বছর ২০ লাখ আমেরিকান যুবক সামরিক বাহিনীতে যোগদানের উপযুক্ত বয়সে পৌঁছে, যাদের ৯২% বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষিত সেনা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অবশিষ্ট ৮% অসুস্থতার কারণে বাদ পড়ে অথবা আইন ভঙ্গ করায় শাস্তি ভোগ করে। যুবক-যুবতী মিলিয়ে প্রায় ৪১ লাখ আমেরিকান প্রতি বছর সামরিক চাকরিতে যোগ দেওয়ার বয়সে পৌঁছে।

সর্বেসর্বা সেনাবাহিনী
সৃষ্টির আদিকাল থেকে যুদ্ধ হচ্ছে নতুন ভূমি দখল, দখল ভূমি পুনরুদ্ধার আর নিজের ভূমির দখল ও সার্বভৌমত্ব ধরে রাখার জন্য, আর এই কাজে স্থলবাহিনীর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আমেরিকার জন্মলগ্ন ১৭৭৬ সাল থেকেই দেশের জন্য লড়ছে স্থলবাহিনী, যা ইউএস আর্মি নামে আজ সুপরিচিত। সে হিসেবে বলা যায়, ইউএস আর্মি ২৪৪ বছর পুরনো। বিশ্ব নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত থিংক ট্যাংক (সংগঠন) এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন (ওয়াশিংটন) ২০১৭ সালের উপাত্তের ভিত্তিতে জানায় যে, আমেরিকার স্থলবাহিনীতে ৪ লাখ ৭৬ হাজার নিয়মিত স্থল সৈন্য, ৩ লাখ ৪৩ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য (মিলিশিয়া বা প্যারামিলিটারি), প্রায় ২ লাখ রিজার্ভ সৈন্য, লক্ষাধিক অস্ত্রবিহীন সৈন্য এবং ৩ লাখ ৩০ হাজার বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।

বর্তমানে মার্কিন স্থলবাহিনীর প্রধান ফোর স্টার জেনারেল মার্ক আলেক্সাডার মিলে। আমেরিকার নিজস্ব নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশটির সার্বিক নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে এমন যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দায়িত্ব পালন করছে এই সেনারা। ছোট-বড় ৩০টি শাখার সমন্বয়ে মার্কিন স্থলবাহিনী গড়ে উঠেছে। যেমন পদাতিক বাহিনী, সাঁজোয়া বাহিনী, গোলন্দাজ বাহিনী, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল ও মেডিকেল কোর ইত্যাদি। উত্তর ক্যারোলিনা, টেক্সাস, আলাবামা ও ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত চারটি পৃথক কমান্ড সদরের অধীনে ২৪টি শাখার মাধ্যমে এই বাহিনী পরিচালিত হয়।
ক্ষুদ্র পিস্তল থেকে শুরু করে বিমান বিধ্বংসী কামান, শক্তিশালী মিসাইল, বিভিন্ন আকারের ট্যাংক ইত্যাদির মাধ্যমে সুসজ্জিত ও সুদক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কিন সেনাদের। যুদ্ধ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক কাজের জন্য মার্কিন স্থলবাহিনীর উড্ডয়ন শাখায় নানা আকৃতির ১৯৩টি বিমান, ৩৩৭২টি হেলিকপ্টার, ৬১৭৫টি চালক বা পাইলট ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে সক্ষম ছোট বিমান বা ড্রোন রয়েছে। তবে ডোনের সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে।
এ ছাড়া পানিপথে চলাচল ও যুদ্ধের জন্য ৫০টি নানা আকৃতির জলযানও রয়েছে মার্কিন স্থলবাহিনীর (সূত্র : উইকিপিডিয়া)। তবে অন্য কিছু উৎসে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে তথ্য পাওয়া যায়। গ্লোবাল ফায়ার এই তথ্যের বাইরে আরও তথ্য দিয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে। এই তথ্য মোতাবেক সামরিক শক্তিতে বলিয়ান শীর্ষ পাঁচটি দেশ হলো যথাক্রমে : আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত ও ফ্রান্স।

আকাশ ছোঁয়া সাফল্যে বিমান বাহিনী
মাটির নিচের বাংকার, কোনো দুর্ভেদ্য দুর্গ, সাগরের জাহাজ কিংবা আকাশে উড্ডীয়মান কোনো বিমান-শত্রুর অবস্থান যেখানেই থাকুক না কেন, তা সমূলে ধ্বংস করার সক্ষমতা রয়েছে আমেরিকা বিমান বাহিনীর। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য মোতাবেক বর্তমানে মার্কিন বিমান বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত জঙ্গি বিমানগুলোর মধ্যে ফাইটার বিমান ২,৩৬২টি, অ্যাটাক বিমান ২৮৩১টি, পরিবহন বিমান ১১৫৩টি, প্রশিক্ষণ বিমান ২৮৫৩টি। এ ছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই বিমানবাহিনী পরিচালনা করছে ৫৭৬০টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে ৯৭১টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার। বিমান বহরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় টি সিক্স-এ ট্যাক্সান টু এবং টি ৩৮৩ ট্যালন নামক প্রশিক্ষণ বিমান। আকাশে উড়ন্ত জঙ্গি বিমানে তেল সরবরাহের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কেসি ১৩৫ স্ট্যাটোট্যাংকার বিমান রয়েছে ৩৪২টি।
পরিবহন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয় সি-১৭এ গ্লোব মাস্টার থ্রি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাইটার এয়ারক্রাফট হিসেবে মার্কিন বিমান বাহিনীর আস্থা ধরে রেখেছে বহুল পরিচিত ও আলোচিত এফ-১৬ সি ফাইটিং ফ্যালকন। এমনি ধরনের বিভিন্ন কোম্পানি ৮৯ মডেলের বিমানে সুসজ্জিত মার্কিন বিমান বাহিনী। অন্যদিকে ৪১ ধরনের হেলিকপ্টার নিয়ে গড়ে উঠেছে মার্কিন বিমানবাহিনী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় নানাবিধ কাজের উপযোগী বেল ২০৬ হেলিকপ্টার, এরপরই রয়েছে সিকরস্কা ইউএইচ ৬০ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার। তল্লাশি ও তদন্ত কাজে পারদর্শী বেল ওএইচ-৫৮ কিওয়া এবং বেল এইচ-১৩ সিওয়াক্স হেলিকপ্টার। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণে পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম ভেরটল এইচ ২১ কার্গো হেলিকপ্টার।
অন্যদিকে সমুদ্রের পানির নিচে থাকা সাবমেরিনের অবস্থান বের করে তা ধ্বংস করতে পারে কামান এসএইচ-২ সিস প্রাইট হেলিকপ্টার। আমেরিকার বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানির সিএইচ-৪৭ সিনুকে হেলিকপ্টারও রয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনীতে। ছয়টি ব্লেডের দুই সেট পাখাবিশিষ্ট এই হেলিকপ্টার ছোটখাটো বিমান, জাহাজ, ট্যাঙ্ক, কামান, গাড়ি এবং সরঞ্জামসহ ৮১ জন সৈন্য বহন বা দড়িতে দড়িতে ঝুলিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে সক্ষম। বর্তমানে মার্কিন বিমান বাহিনীর দায়িত্বে রয়েছেন ফোর স্টার জেনারেল ডেভিড লি গোল্ড ফিয়েন। দেশের সীমা ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বর্তমানে অবস্থান করছে মার্কিন বিমান সেনারা।

না বলতে জানে না মার্কিন নৌ সেনা
বিভিন্ন দিক বিবেচনায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নৌবাহিনী হিসেবে স্বীকৃত আমেরিকার নৌবাহিনী। সবচেয়ে বেশি বাজেট, শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ আর ব্যাপক জনবলের কারণে পৃথিবীজুড়ে সমুদ্রকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে আমেরিকার নৌবাহিনী। শুধু আকার বা শক্তিমত্তাই নয়, গতিশীলতা এবং জল, স্থল এমনকি আকাশপথেও দ্রুত চলাচলের সামর্থ্য আমেরিকান নৌবাহিনীকে একটি আদর্শ ত্রিমাতৃক বাহিনীর মর্যাদা দিয়েছে। আমেরিকার নৌবাহিনীর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ১৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে হালনাগাদকৃত তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে ৩,৩৪,০৬৯ জন নিয়মিত নৌ সেনা, লক্ষাধিক রিজার্ভ নৌ সেনা ২,৭৪,৮৫৪ জন বেসামরিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে আমেরিকার নৌবাহিনী। এই বিশাল জনশক্তির অধীনে চলছে যুদ্ধে মোতায়েনের মতো ছোট বড় ২৯০টি নৌযান।
এর মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সমুদ্রের তলদেশে ডুব দিয়ে আছে ১১২টি সাবমেরিন, যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে ৬৫টি যুদ্ধ জাহাজ আর নিজস্ব জলসীমা পাহারা দিচ্ছে ৪৭টি যুদ্ধ জাহাজ। বিভিন্ন মহাসাগরে ভাসানো হয়েছে ছয়টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, যেখানে অনায়াসে ওঠানামা করতে পারে বিভিন্ন জঙ্গিবিমান। নৌবাহিনী বলতে সাধারণভাবে সমুদ্রে বা জলে বিচরণকারী জাহাজ ও নৌ যোদ্ধাদের চিহ্নিত করা হলেও আধুনিক নৌবাহিনী যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে ত্রিমাত্রিক রূপ ধারণ করেছে। তাই আমেরিকার নৌবাহিনীর জাহাজ পানিতে ভাসে, নৌ বাহিনীরই নিজস্ব বিমান আকাশে ওড়ে এবং উভচর যান একই সঙ্গে জল ও স্থলে চলাচল করে শত্রুকে ঘায়েল করে। অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ছয় ধরনের যুদ্ধ জাহাজের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

যার প্রথমেই রয়েছে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এবং এম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ, যা জল ও স্থলে চলতে পারে। এর পরই দেখানো হয়েছে ক্রুজার যুদ্ধজাহাজ। যা একসঙ্গে একাধিক লক্ষবস্তুতে আঘাত করতে পারে। অন্য কোনো বন্ধুপ্রতিম বাহিনীকে সাহায্য করতে পারে এবং স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট অভিযান চালাতে পারে। লিটোরাল কম্বেট শিপ রয়েছে পরের কাতারে। যা মূলত ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন। এ ধরনের যুদ্ধজাহাজ মূলত উপকূলীয় এলাকায় যুদ্ধ করে, তবে প্রয়োজনে মাঝ সমুদ্রেও যেতে পারে। এই কম্বেট শিপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটে ডেস্ট্রয়ার প্রকৃতির যুদ্ধজাহাজ। গতি ও ক্ষিপ্রতায় এ দুই ধরনের জাহাজ প্রায় এক রকম হলেও ডেস্ট্রয়ার নিজস্ব জলসীমা ও ভূখন্ডে শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়। গভীর সমুদ্রে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে মার্কিন নৌবাহিনীর সাবমেরিন, যা যুদ্ধের সময় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এসব সাবরেমিন, পারমাণবিক অস্ত্র বহন ও নিক্ষেপের কাজেও ব্যবহৃত হয়। ২০১৫ সালে শক্তিশালী আমেরিকান নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন অ্যাডমিরাল জন রিচার্ডসন। নৌবাহিনীর মূল যুদ্ধজাহাজ হিসেবে আদিকাল থেকে ‘ফ্রিগেট’ ব্যবহৃত হচ্ছে। আমেরিকান নেভিতে বর্তমানে ২২টি ফ্রিগেট আছে। যার মূল কাজ শত্রুর হাত থেকে নিজ জলসীমার সব যুদ্ধযান, অন্যান্য রণতরী, এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ইত্যাদির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এসব ফ্রিগেটে বিমান হামলা বা সাবমেরিন হামলা প্রতিহত করার সক্ষমতা আছে।

আবার ফ্রিগেটের নিজস্ব কামান স্থলভাগের দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু বা শত্রুর বিমান ধ্বংস করতে পারে। যে কোনো রণতরীকে চারপাশের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ২৭টি করভেটিস (ছোট রণতরী) রয়েছে আমেরিকার হাতে আরও রয়েছে দ্রুতগতির ক্রুজার। বিশ্বে নৌবাহিনীর জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ করে আমেরিকা। ২০২০ সালে আমেরিকা তার নৌবাহিনীর জন্য প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার বরাদ্দ চেয়েছে। আমেরিকার নেভির সার্বিক শক্তিমত্তার একটি পরিচয় পাওয়া যায় উইকিপিডিয়ায় লিস্ট অব কান্ট্রিস বাই লেভেল অফ মিলিটারি ইকুইপমেন্ট বিভাগে।

মৃত্যুজয়ী এলিট ফোর্স মেরিন কোর
মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে এলিট ফোর্স হিসেবে স্বীকৃত মেরিন কোর, সংক্ষেপে ইউএস মেরিন। কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে গত মাসে (জুন ২০১৯) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বাহিনীর দায়িত্ব তুলে দেন জেনারেল ডেভিড ইলবেরি বার্গারের হাতে। জল, স্থল ও আকাশপথে সমানতালে যুদ্ধ করার জন্য এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সুদক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। স্বতন্ত্র অভিযান, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানে সমানভাবে পারদর্শী মেরিন সেনারা। যুদ্ধকৌশল হিসেবে যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযানে নামানো হয় মেরিন সেনাদের। নিজ দেশে অবস্থান থেকে অনেক দূরে এমনকি শত্রু এলাকার অভ্যন্তরে কিংবা আরেকটি দেশে যুদ্ধ করতে কোনো দ্বিধা করে না মেরিন ফোর্স। আবার জল-স্থলে সমানভাবে যুদ্ধ করতে পারে বলে তারা উভচর বাহিনী হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। উইকিপিডিয়ার হিসাবে ২০১৭ সালে মেরিন কোরে ১,৮২,০০০ নিয়মিত সৈন্য, ৩৮,৫০০ সংরক্ষিত সৈন্য এবং ১,৩০৪টি যুদ্ধবিমান ছিল। যে কোনো যুদ্ধে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে মেরিন সৈন্যরা।
তারপর ক্রমান্বয়ে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে সার্বিক যুদ্ধে একটা সুবিধাজনক অবস্থান সৃষ্টির সক্ষমতা রয়েছে এই দলের। অস্ত্র হিসেবে প্রতিটি মেরিন সেনা কমপক্ষে একটি এম ১৬ রাইফেল অথবা এম ফোর কারবাইন অথবা কল্ট ৯ মি: মি: এসএমজি বহন করে। এ ছাড়াও ভারী মেশিনগান, গ্রেনেড নিক্ষেপের লাঞ্চার, কামান ও ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট এবং ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল চালনায় পারদর্শী মেরিন সৈনারা।
রণকৌশল হিসেবে মেরিন সেনারা সাধারণত নৌযানে করে উপকূলে পৌঁছে। ২০১৯ সালে মেরিন কোরের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট ৪৩,১৫২ মিলিয়ন ডলার, যা পৃথিবীর বহু দেশের মোট বাজেটের চেয়েও বেশি। এই বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় জল, স্থল, ও আকাশপথে চলাচলের জন্য সাধারণ যানবাহন, জঙ্গিবিমান, যুদ্ধজাহাজ, মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট, ট্যাংক, কামান ও অন্যান্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।

পরমাণুতে পরাক্রমশালী
বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মূল দায়িত্ব পালন করছে জাতিসংঘ। অথচ জাতিসংঘের মোড়ল বলে স্বীকৃত ব্রিটেন, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং আমেরিকার হাতে রয়েছে চরম বিধ্বংসী মারণাস্ত্র পারমাণবিক বোমা। এই পাঁচটি দেশই আবার আন্তঃমহাদেশীয় বেলাস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে পারমাণবিক বোমা ফেলে দেশটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এ ছাড়াও পারমাণবিক অস্ত্র গোপনে তৈরি করেছে অথবা তৈরির প্রক্রিয়ার আছে বলে মিডিয়ায় শিরোনাম হয় পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান প্রভৃতি দেশ। তবে বিশ্বের বুকে সবার দুশ্চিন্তার কারণ আমেরিকা।
কারণ আমেরিকাই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট আমেরিকার একটি বোমারু বিমান জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর ‘লিটল বয়’ নামের ৪,৪০০ কেজি ওজনের পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এতে শহরটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে ৬৬ হাজার মানুষ মারা যায় এবং ৬৯ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়, যাদের অধিকাংশ পরে মারা যায়। ঠিক তিন দিন পর ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট আমেরিকার আরেকটি যুদ্ধবিমান আবারও জাপানের নাগাসাকি শহরের ওপর ‘ফ্যাটম্যান’ নামের ৪,৬৭০ কেজি ওজনের আরেকটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এ ক্ষেত্রে ধ্বংস হয় নাগাসাকি শহর এবং তাৎক্ষণিক মৃত্যু
র কোলে ঢোলে পড়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। একই সংখ্যক মানুষ অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়ে পরবর্তীতে মরণ যন্ত্রণা ভোগ করে এবং ক্রমান্বয়ে মারা যায়। আমেরিকা এভাবে যুদ্ধে ব্যবহার ছাড়াও পরীক্ষামূলকভাবে ১০৫৪টি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ১৯৬৭ সালে আমেরিকার হাতে সর্বোচ্চ ৩,১২,৫৫৫টি পারমাণবিক বোমা বা পারমাণবিক অস্ত্র ছিল।
পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্দোলন ও শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তা কমতে থাকে। ১৯৯০ এর কাছাকাছি সময়ে সংখ্যা কমে প্রায় ৪০ হাজারে পৌঁছে। বর্তমানে ইউকিপিডিয়ার মতে, আমেরিকার হাতে প্রায় ৪,০০০ পারমাণবিক অস্ত্র (বোমা) আছে, যার মধ্যে প্রায় ১,৮০০টি মোতায়েনকৃত এবং যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এই ক্ষমতাবলেই আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ এবং মিলিটারি সুপার পাওয়ার বলে বিবেচিত।

ছোট-বড় বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের সক্ষমতা রয়েছে আমেরিকার। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির নাম ডেভিক্রকেট, যা বাংলাদেশের একটি সাধারণ ঢেঁকির সমান।
আমেরিকা নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার এবং ক্রুজারজাতীয় যুদ্ধজাহাজ এবং তিন ধরনের সাবমেরিন ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে জল-স্থল বা আকাশে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করতে পারে। আমেরিকার গোলন্দাজ বাহিনীও বিশেষ কামানের মাধ্যমে পরমাণু বোমা সংযুক্ত শেল নিক্ষেপ করতে পারে।
আর বিমান বাহিনী এ ক্ষেত্রে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে নানা প্রকার সামরিক মহড়া ও পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের সময়। আমেরিকার যে কোনো বড় আকারের পারমাণবিক বিস্ফোরণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র প্রেসিডেন্টের যিনি সার্বিকভাবে সেনা, নৌ, বিমান ও মেরিন বাহিনীরও সর্বময় প্রধান বা কমান্ডার ইন চিফ। এই আদেশটি একটি বিশেষ কোড আকারে দিয়ে থাকেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতার ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এক নজরে ২০১৭ সালের মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনী

👉 নিয়মিত সৈন্য (স্থলবাহিনী) ৪,৭২,০৪৭ জন
👉 আর্মি ন্যাশনাল গার্ড ৩,৪৫,১৫৩ জন
👉 নিয়মিত নৌ সেনা ৩,১৯,৪৯২ জন
👉 নিয়মিত বিমান সেনা ৩,১৮,৫৮০ জন
👉 আর্মি রিজার্ভ (সংরক্ষিত সেনা) ২,১৯,০৫৪ জন
👉 নিয়মিত মেরিন সৈন্য ১,৮৪,৪০১
👉 এয়ার ন্যাশনাল গার্ড ১,০৫,৬৭০ জন
👉 মেরিন কোর রিজার্ভ (সংরক্ষিত মেরিন সেনা) ১,০৪,৪১৯ জন
👉 সংরক্ষিত নৌ সেনা ১,০৩,৬৬০ জন
👉 সংরক্ষিত বিমান সেনা ৯৯,২৬৯ জন
👉 নিয়মিত কোস্টগার্ড সৈন্য ৪০,৬০০ জন
👉 সংরক্ষিত কোস্টগার্ড সৈন্য ৭,৮৫৭ জন

সূত্র : মার্কেট পোর্টাল স্টেটিসটিকা.কম
Designated Marksman Rifle হিসেবে আমার কাছে M110 CSASS টা কেন যেন খুব ভালো লাগে। CSASS মানে Compact Semi Automatic Sniper System এটাই এর ডাকনাম। এটি প্রথাগত স্নাইপার রাইফেল নয় বরং এটি একটি DMR বা Designated marksman rifle। এগুলোকে এসল্ট রাইফেল এবং স্নাইপার রাইফেলের মাঝামাঝি ভার্শন বললেই ভালো।

মার্কসম্যান বা শার্পশুটারের সাথে একজন ট্রেইন্ড স্নাইপারের সামান্য পার্থক্য রয়েছে। একটি এসল্ট রাইফেলের ইফেক্টিভ রেঞ্জ ৪০০-৫০০ মিটার পাবেন কিন্তু সেটা যুদ্ধক্ষেত্রে সবসময় ব্যবহার হবেনা।৫০০ মিটার বা আধা কিলোমিটার কিন্তু যথেষ্ট ভালো রকমের দূরত্ব। বর্তমান যুগের মানুষের জন্য উন্নত অপটিক্যাল সাইট ছাড়া এত দূরে ইফেক্টিভ কিলশট নেয়া বেশ কষ্টকর। এমনকি সাইট থাকলেও রাইফেলের ম্যাক্সিমাম রেঞ্জের ব্যবহার খুব কম হয়।

আবার ডেডিকেটেড স্নাইপার রাইফেল বা স্নাইপারম্যান যে সবসময় আপনার টিম/স্কোয়াডে থাকবে এমনটা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে ইনফেন্ট্রি স্কোয়াডে থাকা সবচেয়ে সেরা শার্প শুটার তথা Designated marksman(DM) কে টিমের ব্যবহৃত রেগুলার বুলেট ফায়ারে সক্ষম স্পেশাল রাইফেল দিতে হবে যা দিয়ে ৩০০ থেকে ৬০০ মিটার অনায়াসে নিখুঁত কিলশট নেয়া সম্ভব।
এজন্য এসব রাইফেলকে Designated marksman rifle বা DMR বলে। এজন্য এসব রাইফেলের ম্যাক্সিমাম রেঞ্জ ৮০০-১০০০ মিটার হয়। ম্যাগাজিন সাইজ ১০,২০,৩০ রাউন্ডের হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিমের বাকি সবাই যে বুলেট ব্যবহার করে, DM ও একই বুলেট ব্যবহার। ফলে আলাদা স্পেশালাইজড স্নাইপার বুলেট বা রাইফেল নিতে হয় না। আবার টেলিস্কোপিক সাইটের পাশাপাশি প্রয়োজনে লেজার এইমিং ডিভাইস বা হলোগ্রাফিক/রেড ডট সাইটের হাইব্রিড কম্বিনেশন সাজিয়ে শর্টরেঞ্জ কমব্যাটের উপযোগী করা যায়। সমস্যা একটাই এটি সেমি-অটোমেটিক বিধায় এতে ৩/৪ রাউন্ডের ব্রাস্টশট তথা ফুল অটোমেটিক মুডে গুলি ছোড়া যায় না (তবে এটা তেমন কোনো সমস্যা নয়)

➡মোটকথা সকল ডেডিকেটেড স্নাইপার রাইফেলই DMR, কিন্তু সকল DMR ডেডিকেটেড স্নাইপার রাইফেল নয়। স্নাইপিং মিশনের ধরণ, টার্গেটের দূরত্ব, টার্গেট এলাকার পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে স্নাইপার রাইফেল ও বুলেট নির্বাচন করা হয়।
গ্রাউন্ড টিমের যদি স্বল্প রেঞ্জ যেমন ৬০০-৮০০ মিটারে ফাস্ট স্নাইপিং সাপোর্ট (শত্রুর সংখ্যা খুবই বেশি) দরকার হয় তাহলে DMR সবচেয়ে আদর্শ অস্ত্র। যদি তুলনামূলক লংরেঞ্জ স্নাইপার ফায়ার সাপোর্ট দরকার হয় তাহলে তো স্পেশাল স্নাইপার রাইফেল (যেমন বোল্ট একশন) ও স্পেশাল বুলেট (যেমন .৩৩৮ ম্যাগনাম বা .৫০ বিএমজি) ব্যবহার হয়।

মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। এম-১১০ 7.62×51mm ন্যাটো বুলেট ফায়ার করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের Knight's Armament Company, তাদের SR-25 DMR রাইফেলটির উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত বলতে হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ফোর্স সোয়াট SR-25 ব্যবহার করে। SR-25 মূলত AR-10 এবং AR-15 এর উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে। AR-15 হচ্ছে বিখ্যাত M16 এসল্ট রাইফেলের  ফিচার সমৃদ্ধ।
(AR15 সেমি অটোমেটিক রাইফেল এবং এটি মার্কিন সিভিলিয়ানদের কাছে জনপ্রিয় অস্ত্র)

👉 এম-১১০ এর তুলনামূলক হালকা A1 ভার্শন দিয়ে আগেরগুলোকে রিপ্লেস করা হবে। M110A1 বানানো হয়েছে G28 স্নাইপার রাইফেলের উপর ভিত্তি করে। এটি মূলত হেকলার এন্ড কচ HK417 এর মামাতো ভাই।
👉 10x টেলিস্কোপিক সাইট, বাইপড ও লোডেড ২০ রাউন্ডের(!) ম্যাগাজিনসহ এর ওজন ৬.৯৪ কেজি।
👉 ২০০৮ থেকে এখনও সার্ভিস দেয়া এই রাইফেলটি আফগান, ইরাক যুদ্ধসহ সিরিয়ায় সাম্প্রতিক তুর্কি-কুর্দি যুদ্ধেও ব্যবহার হয়েছে।
👉 ইউএস আর্মি-মেরিন ছাড়াও তুরস্ক, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পোল্যান্ড, মেক্সিকো, ইরাক, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, গ্রিস, হাঙ্গেরি, কানাডা, ব্রাজিল, আর্মেনিয়া, স্পেন এটি ব্যবহার করে।
👉 এটির রেঞ্জ ৮০০ মিটার।
অনেকের কাছে এই রেঞ্জ কম মনে হবে।এর কারন এটি একটি DMR, ডেডিকেটেড স্নাইপার রাইফেল নয়। সে হিসেবে রেঞ্জ ঠিকই আছে।৬০০-৮০০ মিটারের বেশি দূরে ইফেক্টিভ শট নেয়ার জন্য স্পেশাল ট্রেইনিং লাগে।আর ব্যাটলফিল্ডে একজন শার্পশুটারের হাতে DMR থাকা মানে শত্রুর জন্য আতঙ্ক!